২২শে কার্তিক, ১৪১৭ বাংলা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাববিল আলামিন ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা সাইয়েদিনা মুহাম্মাদ আল মুস্তাফা ওয়ালিহি আত তাইয়িবিনা ওয়া সাহবিহিল মুনতাজাবিন পবিত্র কাবা শরিফ হল : ঐক্য ও সংহতির রহস্যকেন্দ্র, তৌহিদ ও আধ্যাতিকতার দৃষ্টান্ত, হজ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাববিল আলামিন ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা সাইয়েদিনা মুহাম্মাদ আল মুস্তাফা ওয়ালিহি আত তাইয়িবিনা ওয়া সাহবিহিল মুনতাজাবিন
পবিত্র কাবা শরিফ হল : ঐক্য ও সংহতির রহস্যকেন্দ্র, তৌহিদ ও আধ্যাতিকতার দৃষ্টান্ত, হজ্বের মৌসুমে আগ্রহী হৃদয় সমূহের মেজবান ও আশা-ভরসা; যার জন্য সারা বিশ্ব থেকে মুসলিম জনতা মহান পরওয়ারদেগারের ডাকে সারা দিয়ে লাব্বাইক বলতে বলতে ইসলামের উৎস ভূমিতে ধাবিত হয়েছে। আজকে ইসলামি উম্মাহ, এই একত্মবাদী ধর্মের অনুসারিদের ঈমানের গভীরে যে বিস্তৃত ও রকমারি সচিত্র রয়েছে তার সংক্ষিপ্ত রূপ বিশ্বের চতুর্দিক থেকে আগত তাদের প্রেরিত প্রতিনিধিদের স্বচক্ষে অবলোকন করবে এবং এই মহান ও নজিরবিহীন সম্পদকে চিনতে সক্ষম হবে।
এই আত্ম পূনরমূল্যায়নের মাধ্যমে আজ ও আগামি দিনের বিশ্বে মুসলমানদের উপযুক্ত স্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে আমরা জানতে ও বুঝতে সক্ষম হব এবং সেদিকে ধাবিত হতে পারব।
আজকের বিশ্বে ইসলামী স্রোতের বিস্তার এমন এক বাস্তবতা যা আগামী দিনের ইসলামী উম্মাহকে কল্যাণের সপ্ন দেখায়। তিন দশক পূর্বে ইসলামী বিপ্লবের যে সফলতা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে হয়েছে তার মাধ্যমে এরূপ শক্তিময় উত্থানের সূচনা হয়েছে, আমাদের জাতি তখন থেকেই বিরামহীনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সম্মুখের সকল বাধা-বিপত্তি সরিয়ে দিয়ে অনেক দূর্গ জয় করেছে। আগ্রাসী দুশমনদের মার প্যাচের পদ্ধতি শক্তিশালী হবার কারণে এবং ইসলামের মোকাবেলা করার লক্ষে তারা যে অধিক বাজেট নির্ধারণ করছে, সে কারণেই আমাদের এহেন উন্নতি সাধিত হয়েছে। ইসলামের ভয়ে দুশমনরা বিস্তৃত অপ প্রচারের মাধ্যমে ইসলামী ফেরকা সমূহের মধ্যে মত পার্থক্য ও বিদ্দেশ সৃষ্টি করছে। সম্মান, স্বাধীনতা ও জাগরণের লক্ষে ইসলামী উম্মাহের সুশৃংখল ও দৃঢ় পদক্ষেপের মোকাবেলায় সুন্নিদের বিরুদ্ধে শিয়াদের এবং শিয়াদের বিরুদ্ধে সুন্নিদের মিথ্যা শত্রুতার প্রচেষ্টা, মুসলিম রাষ্ট্র নায়কদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি, তা আরো শক্তিশালী করার অপচেষ্টা, তাকে অমিমাংশিত দুশমনি ও বিরোধে পরিণত করার ইচ্ছা এবং যুব সমাজের চরিত্র ধংশকারী ফ্যাসাদ সৃষ্টির পায়তারা সহ সকল প্রতিহিংসার আগুন জালানো ও বিসৃংখলা সৃষ্টির প্রচেষ্টায় তারা লিপ্ত রয়েছে।
ত্রিশ বছর পূর্বকার অপরাজেয় যায়নবাদী সরকার আজকে তার সেরূপ অবস্থাতে নেই, দুই দশক আগের আমেরিকা ও পাশ্চাত্য আর এমন অবস্থাতে নেই যে, মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে এককভাবে যেকোন সেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। দশ বছর পূর্বের মত আজ আর এমন অবস্থা নেই যে, এই অঞ্চলের জাতি সমূহের জন্য পারমানবিক ও অন্যান্য আনবিক শক্তি তাদের নাগালের বাইরে ও কল্পণাপ্রসূত হয়ে থাকবে। আজকের ফিলিস্তিনি জাতি অপ্রতিরোধ্য সৈনিকে পরিণত হয়েছে, লেবাননী জাতি একাই যায়নবাদী সরকারের অন্তসারসূন্য ভাবমূর্তিকে খর্ব করেছে এবং তারা মাত্র ৩৩ দিনের যুদ্ধে তাদের উপর বিজয় অর্জন করেছে; আর ইরানী জাতি ইসলামের পতাকা ধারী ও দূর্গর জয়ের লক্ষে সেদিকে ধাবমান রয়েছে।
আজ দাম্ভিক আমেরিকা স্ব-ঘোষিত মুসলিম এলাকা সমূহের অধিপতি এবং যায়নবাদী সরকারের প্রকৃত সমর্থক হিসেবে আফগানিস্তানে যে কাদামাটি নিজেই সৃষ্টি করেছে সেখানে সে আটকে পড়েছে, ইরাকি জনগণের উপর অর্পিত সকল অপরাধের হোতা আজ কোনঠাসা হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং দূর্যোগপূর্ণ পাকিস্তানে অন্য সকল সময়ের চেয়ে অধিক ধিকৃত হচ্ছে।
আজ ইসলাম বিরোধী শক্তি-যারা দুই শতাব্দি অবধি মুসলিম জাতি ও সরকার সমূহের উপর জুলুমবাদী খবরদারি করে আসছিল এবং তাদের সম্পদ লুট করে নিচ্ছিল, তারা আজ এহেন প্রভাবের বিলুপ্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম জাতি সমূহের সাহসী দৃঢ়তা অবলোকন করছে।
অপরপক্ষে ইসলামী সচেতনতার যাত্রা প্রতিনিয়ত ঊর্দ্ধগতি ও গভীরতার দিকে ধাবমান।
এ আশাবাদী ও সুসংবাদপূর্ণ অবস্থা একদিকে যেন আমাদের মুসলিম জাতি সমূহকে অন্য সকল সময়ের চেয়ে অধিক আশ্বস্ত এবং অবশ্যই আগামী শুভ দিন গুলোর বার্তা বহন করে। অন্যদিকে অতিত থেকে শিক্ষা নিয়ে সকল সময়ের চেয়ে অধিক সচেতনতার পরিচয় আমাদেরকে দিতে হবে। এ সাধারণ আহ্বান নিঃসন্দেহে অন্য সকলের চেয়ে দ্বীনি আলেম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বুদ্ধিজীবি ও যুবকদেরকে বেশি দায়িত্ববান করে তুলে এবং তাদের কাছ থেকে অগ্রনী ভূমিকা ও অধিক প্রচেষ্টা আশা করে।
কোরআনুল করিম সুস্পষ্টভাবে আমাদের উদ্দেশ্যে বলছে :
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ
মুসলিম উম্মাহ এ সম্মানিত ঘোষণায় আবির্ভূত হয়েছে। মানবতার জন্য এ উম্মতের আবির্ভাবের উদ্দেশ্য মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ সাধন করা। এ মহা দায়িত্ব নেক কাজের নির্দেশ অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা এবং আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস সৃষ্টির ক্ষেত্রেও রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শয়তানী শক্তির থাবা থেকে জাতি সমূহকে মুক্তি দানের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ট কোন নেক কাজ আর হতে পারে না। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদীদের খেদমত ও তাদের প্রতি আনুগত্যের ন্যায় অধিক অপছন্দনীয় অসৎ কোন কাজ হতে পারে না। আজ ফিলিস্তিনি জাতি ও অবরুদ্ধ গাজার জনগনকে সাহায্য, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক ও কাশ্মিরের ন্যায় জাতি সমূহের সাথে সমবেদনা ও সহযোগিতা, আমেরিকা ও যায়নবাদী  সরকারের সীমালংঘনের মোকাবেলায় দৃঢ়তা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টা, মুসলিম ঐক্যের রক্ষা, অপশক্তি সমূহ ও সেবাদাসমূলক বক্তব্য যা মুসলিম ঐক্যের প্রতি আঘাত স্বরূপ তার সাথে সংগ্রাম, সে ব্যাপারে সচেতনতার প্রসার ও দায়িত্বানুভূতি সৃষ্টি এবং মুসলিম বিশ্বের সকল স্থানে মুসলমান যুবকদের মাঝে দায়িত্বানুভূতি সৃষ্টি করা উম্মতের দায়িত্ববান শ্রেণীর মহা দায়িত্ব।
হজ্বের শান-সৌকতময় এ দৃশ্য আমাদেরকে এ সকল দায়িত্ব পালন করার জন্য এক উপকারী ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরে এবং অধিক প্রচেষ্টা ও হিম্মতের প্রতি আহ্ববান জানায়।
ওয়াস সালামু আলাইকুম
সাইয়েদ আলী হুসাইনী খামেনেঈ
১লা জিলহজ্ব, ১৪৩১ হি:
৬ই নভেম্বর, ২০১০ খৃ:
২২শে কার্তিক, ১৪১৭ বাংলা


| شناسه مطلب: 11430